আগুন-পলাশের দেশে
–সুমিত মোদক
বসন্তের আলো গায়ে মেখে এসো
আমাদের এই লালমাটির দেশে,
আগুন-পলাশের দেশে;
তুমি এলে জানি,
গাছে গাছে কোকিল ডেকে উঠবে;
পলাশ তার ফুল টুপটাপ করে বিছিয়ে দেবে
তোমার ফিরে আসার পথে;
আর মাদলের বোল উঠবে –
ধিরতা-ধিতাং -ধিরতা-ধিতাং …
বসন্ত বাতাসের শরীর জুড়ে;
জানো তো টিলার মাথার উপর দিয়ে
সূর্য্যটা যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে
তখন বুকের ভিতর শব্দ ওঠে;
তোমার শব্দ, ভালোবাসার শব্দ– আসি …
তার পর মাস গেল, বছর গেল,
বছরের পর বছর গেল,
তোমার আর আসা হলো না;
তোমার আসার অপেক্ষায় থেকে গেলাম
আমার মাটিতে;
জানি , তুমি হয়তো ভুলে গেছো
আমার চোখ, আমার ঠোঁট, আমার …
আমাদের …
কিন্তু, তুমি কি ভাবে ভুলবে বসন্তের আগুন-পলাশ!
যে তোমাকে আগুন জ্বেলে ছিল বুকের ভিতর;
যে তোমাকে দিয়েছিল ভালোবাসার শব্দ,
সে যে আজ আগুন জ্বেলেছে এ লালমাটির দেশে,
এ টিলাভূমির দেশে;
আমি এখন টিলার উপর দাঁড়িয়ে
আকাশ ছুঁয়ে থাকি;
তোমার আকাশ, তোমার স্বপ্ন, তোমার শব্দ …
তুমিই তো শিখিয়েছিলে– শব্দই ব্রহ্ম …
অথচ, তুমি আজ নাগরিক বাউল;
আমি সেই দিন্দা ঝোরা;
ঝরঝর করে প্রতিনিয়ত দু’ চোখ থেকে
জল ঝরে পড়ছে,
আবার সে জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে শূন্যে,
মহাশূন্যে;
মহুলের গন্ধে বুনো হাতির দলও
ঢুকে পড়ে গ্রামে;
যেখানে আটপৌরে জীবনের ধারাপাত;
যেখানে খসে পড়া পাখির পালক
জায়গা করে নেয় সাঁওতাল রমণীর মাথার খোঁপায়;
যদি কোনও দিন ফিরে আসো
এ আগুন-পলাশের দেশে,
এ নুড়ি কাঁকুরে পথে;
সে দিন দুজন মিলে টিলার উপরে উঠে
পূর্ণিমার জ্যোৎস্না মাখবো,
আর তোমাকে ফিরিয়ে দেবো তোমারই প্রতিশ্রুতি;
তুমি ভালো করেই জানো
আমার সব আছে, সব, সব কিছুই …
এই আমার আগুন-পলাশ,
এই আমার লাল মাটির ধুলো,
এই আমার টিলার উচ্চতা;
এই আমার কুমারী নদী,
যে কি না আজও প্রবাহিত পাথর নুড়ি
ছুঁয়ে ছুঁয়ে;
ঠিক আমার মতো;
ঠিক আমাদের মতো।।
অসাধারণ। অপরূপ।
অসাধারণ। অপরূপ।